জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের এনামুল হকের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম। গত এপ্রিলে তীব্র প্রসব বেদনা শুরু হলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে তাকে নিয়ে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে রওনা হন স্বজনরা। করোনাভাইরাসজনিত লকডাউন কার্যকর করতে তখন বিভিন্ন রাস্তায় স্থানীয় জনগণ বাঁশ, ইট, গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখেছিল। একের পর এক সেসব বাধা সরিয়ে হাসপাতালে যেতে অনেক সময় লাগছিল তাদের। এদিকে প্রসব বেদনাও ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছিল ঝর্ণা বেগমের। শেষ পর্যন্ত পৌরসভার কলেজ মোড় এলাকায় রাস্তার পাশেই অটোরিকশা থামাতে বাধ্য হন স্বজনরা। ছুটে আসেন আশপাশের বাড়ির নারীরা। তাদের সহযোগিতায় অটোরিকশায়ই পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। যেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন মা ও শিশু দু’জনই। সুস্থ থাকায় তাদের আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না নিয়ে বাড়িতেই ফিরিয়ে আনা হয়।
ঝর্ণা বেগম সমকালকে বলেন, ‘জীবন চলে যাচ্ছিল; কিন্তু ছেলের মুখ দেখার পর সব কষ্ট ভুলে গেছি!’
জগতের সব মা-ই একেকজন ঝর্ণা বেগম। নিজের প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান। নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে পরম মমতায় শতকষ্ট সয়ে মানুষ করে তোলেন। প্রতিদিনই সেই মাকে ভালোবাসার দিন; তবে সেই প্রতিদিনের মধ্যে আজ তাকে বিশেষভাবে সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানানোর দিন। আজ ‘বিশ্ব মা দিবস’। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালন করা হয় এই দিবসটি।
এবারের মা দিবস বিশ্বজুড়ে এসেছে একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সারাবিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যপ্ত। এই দুর্যোগময় দিনে সন্তানকে রক্ষায় মায়েরা জীবন পণ করে ঘরের মধ্যে আগলে রাখছেন তাদের। সর্বক্ষণ ব্যতিব্যস্ত তারা সন্তানের সার্বিক নিরাপত্তায়। মা শুধু নিরাপত্তাদাত্রী নন, সন্তানের প্রথম এবং চিরকালীন শিক্ষকও বটে।
কীভাবে এলো এই বিশ্ব মা দিবস? যুক্তরাষ্ট্রের আনা জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসের উদ্যোগে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। আনা জার্ভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তার মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস অনাথদের সেবায় জীবন ব্যয় করেন। ১৯০৫ সালে মারা যান মেরি। কিন্তু অনাথদের জন্য মেরির এই নিঃস্বার্থ উৎসর্গিত জীবনের কথা অজানাই থেকে যায়। কিন্তু নিভৃতচারী মায়ের প্রতি নিজের সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে নতুন এক উদ্যোগ নেন আনা জার্ভিস- দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সব মাকেই স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।
১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানিসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে।
সূত্র : সমকাল